সুমাইয়া আক্তার শিখা:
পার্কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে গড়াই নদী। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ পাখির কেচর মেচর শব্দে মুখর থাকতো পার্কটি। এখন সেখানে শুনশান নীরবতা। শহরের ঠিক পাশেই নন্দলালপুর ইউনিয়নের বড়ুরিয়া পাখি পার্কটি অবস্থিত। দেখে বোঝার উপায় নেই শেষ কবে এখানে কেউ এসেছিল। পার্কজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। বসার জায়গাগুলোয় অযত্ন- অবহেলার ছাপ সর্বত্র।পার্কটির নাম (পাখি পার্ক) ১৯৯৭ সালে পার্কটি করার পর আর সংস্কার করা হয়নি।প্রায় ১৮ বছর এভাবেই পড়ে ছিল।২০১৭ সালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের অধীনে থাকা পার্কটির কিছু টা সংস্কার হয়।২০১৭ সালের পর থেকে বহুদিন ধরে পার্কটি অযত্নে থাকায় অকেজো হয়ে গেছে বড়ুরিয়া অবস্থিত পাখি পার্ক টি। বসার বেঞ্চগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে l পার্কটি ঘুরে দেখা যায়, পার্কের মাঝখানের কয় একটি বেঞ্চ আছে । জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, তৎকালীন জেলা প্রশাসকের অর্থায়নে ২০১৭ সালে পার্কের সৌন্দর্য বাড়াতে বেশ কিছু টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। কিন্তু পরে পার্কটির কী হাল হয়েছে, তা কেউ ঘুরেও দেখেনি। পার্কে বসে থাকা এলাকার বাসিন্দা শুকুর আলী বললেন, গ্ৰামের ভেতরে প্রাকৃতিক পরিবেশের একটা পার্ক, লোকজন একটু ঘুরতে আসতে পারত। কিন্তু অযত্ন ও দায়িত্বহীনতা কারণে কীভাবে নষ্ট হচ্ছে পার্কটি, দেখলে তা বোঝা যায়। পরিবার নিয়ে কেউ এখানে আসেন না, মাদকসেবীরাই আড্ডা দেয়।বেলা চারটার দিকে পার্কে তিন-চারজন ব্যক্তিকে একসঙ্গে বসে জটলা বানিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। সিগারেটসদৃশ কিছু ফুঁকছিলেন। জটলার আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছিল উৎকট গন্ধ। এলাকার এক বাসিন্দা বললেন, রাতের বেলা পার্কে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যা নামলেই পুরো পার্ক অন্ধকারে তলিয়ে যায়।এই পার্কটির বিষয়ে কুমারখালী পৌর কাউন্সিলর এস,এম, রফিক জানান, কুমারখালী সাংস্কৃতিক রাজধানী এখানে বিনোদনের জন্য এই পার্কটি নির্মান করা হয়েছিল। এখন এই পার্কটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে এসে বসার জায়গা নেই। পার্কটি জরাজীর্ণ অবস্থা পরে আছে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, আমি এখানে আসার পর এই পার্কটি সম্পর্কে আমার জানা নেই। এমন সময় জানলাম, এই মুহূর্তে
পদোন্নতিজনিত কারণে বদলি হয়ে যাচ্ছি। এই বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক দিপু মালিক জানান,কুমারখালী ইতিহাস-ঐতিহ্যে সাংস্কৃতি বিনোদন অপার সুন্দর প্রকৃতি ঘেরা এই কুমারখালীর বিভিন্নাঞ্চলে প্রকৃতির সাথে নদী সংযোগ থাকায় এলাকাটি বিনোদন নগরী হিসেবে গড়ে তুলে ধরা যায় এই পাখি পার্ক টি।
তারই অংশ হিসেবে বড়ুরিয়া পাখি পার্ক, হাসিমপুর পদ্মা পার্ক এবং কয়া গড়াই নদীর কোল ঘেষে “বাঘা যতীন পার্ক রয়েছে। কিন্তু বড়ুরিয়া পাখি পার্কটি অবস্থা ভালো না। এখানে কেউ এখন আসেনা বেড়াতে।
উল্লেখ্য যে, শহর রক্ষা বাঁধের অংশ হিসেবে হিসেবে ১৯৬৯ সালে অর্ধকিলোমিটার জুড়ে এই বাঁধটি নির্মিত হয়। আনুমানিক ৪০ বিঘা জমির উপর নির্মিত এই পাখি পার্কটি পিকনিক স্পট, দর্শনার্থীদের বিশ্রাম ও আনন্দভোগের জন্য সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা হাওয়ায় সুযোগ ছিল। কিন্তু দেখভালের অভাবে আজ বড়ুরিয়া পাখি পার্ক তার রুপ হারিয়েছে। একসময় পার্কটিতে শিশুরা খেলত, নারী-পুরুষেরা সকাল- বিকেল হাঁটার সুযোগ পেত। বর্তমানে পার্কটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস নিতে আর মুক্ত আকাশের নিচে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য ছুটে যায়, সবুজ অরণ্যে ঘেরা পার্কগুলোতে। কখনো পরিবার, কখনো বন্ধুবান্ধব কিংবা কখনো প্রিয়জনকে নিয়ে কোলাহল ছেড়ে একটু শীতল বাতাস নিতে ছুটে যায় আশপাশের মানুষ পার্কে।