ডন ডেস্ক:-
মোহাঃ মাহফুজুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক অর্থনীতি বিভাগ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ব্যবসায়ী মনোভাবের কারণে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে চলেছেঃমোহাঃ মাহফুজুর রহমান,সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ একটি স্থিতিশীল অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিলো সাবেক অন্তঃবর্তী সরকার আর একটি উন্নত দেশের অর্থনীতিতে প্রায় পৌঁছে ছুঁই ছুঁই অবস্থাকে পেছন থেকে টেনে ধরছে এদেশের লোভী ও অকৃজ্ঞ কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, যারা নিজেদের ব্যবসায়ী লাভ ছাড়া কিচ্ছু ভাবছে না, কে বাঁচলো আর কে মরলো তাতে তাদের কিচ্ছু যায় আসে না। ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পর্যালোচনা করলে এককথা স্পষ্ট অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে ভেংগে চুরমার করেছে ডক্টরেটধারী কিছু কর্তাব্যক্তির গোয়ার্তমি নির্দেশ ও নির্দেশনা। মজুদের অভিযোগে চাল-ডাল মিলারদের জরিমানা, ভেজালের নামে ঘন ঘন মোবাইল কোর্ট এবং মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা আদায়, দুর্নীতিবাজ অসৎ ব্যবসায়ীকে নিয়ন্ত্রণের নামে ভীতসন্ত্রস্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে সকল উৎপাদন স্থবির বন্ধ করে, ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রেখে, কৃতিম সংকট সৃষ্টি করে এবং সরবরাহ চেইন ভেংগে ফেলা যার প্রভাব সর্বশেষ ভোক্তা ও সাধারণ ক্রেতা জনসাধারণের উপর পড়লো বেশি দাম দিয়ে সকল প্রকার দ্রব্য ক্রয় করতে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে দেশে সব ধরনের তেলের দাম বৃদ্ধি করে আকাশচুম্বী অবস্থায় নিয়ে গেছে। যার কারণে দামস্তর বেড়েছে কয়েকগুণ লাফিয়ে লাফিয়ে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস পেলেও আজ অবধিও জ্বালানি তেলের দেশীয় বাজারে সেভাবে দাম সমন্বয় করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ফলে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দামস্তর ক্রমান্বয়ে চাহিদা বৃদ্ধির অজুহাতে আরও বেড়েছে। ২০০৮ এর পর জনগণের রায় নিয়ে গঠিত বর্তমান সরকার এসেই জনগণের নাভিশ্বাস উঠা দ্রব্যের দামস্তরে নাগাল টেনে ধরার চেষ্টা করলেন এবং অনেকটা সফলও হলেন। যেমন ইন্টারিম সরকারের সময় এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার সাধারণ ক্রেতা যেখানে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় কিনতেন সেটা ৮৫০ থেকে ৯৫০ এর মধ্যে বিক্রি হতে লাগলো। ব্যবসাক্ষেত্রে গড়ে উঠা একটা দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভেঙে শৃঙ্খলায় আনার চেষ্টা করেছেন। সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে ২০০৬’র আগে যে চালের দাম ছিলো ১৭-২০ টাকা তা একলাফে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হতে লাগলো। শতচেষ্টা সত্ত্বেও চালের দাম আজ অবধিও আর কমাতে সম্ভব হয়নি, হু হু করে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে চালের কেজি ৬২-৬৫ টাকা। কিন্তু এ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দামও সাধারণ জনগণের গা সইয়ে গিয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবির বেতন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তীব্র দাবির মুখে বেসরকারি চাকুরেদেরও বেতন বাড়াতে সক্ষম হলেও অর্থনীতিতে তার তেমন কোন সুফল ছিঁটেফোঁটা দেখা যায়নি। সাধারণ জনগণের কল্যাণ নিশ্চিতকরণের জন্যে এবং বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্যে বর্তমান সরকার যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা তা অনেকটা সফলও হয়েছিলো কিন্তু করোনা নামক বৈশ্বিক অতিমারী সকল অর্জনই যেনো লণ্ডভণ্ড করতে চলেছে। এদেশের ইতিহাসে হয়তো লেখা থাকবে কিছু লোভী স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবীর অপপ্রচার, ভণ্ডামি কিছু ব্যক্তির নাম, বিশেষজ্ঞ কমিটি, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত প্রচার, গরীব দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণির ক্ষুধা নিবারণে সরকারের করণীয়, পেশাজীবি সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, হুজুগে উৎসুক জনতা, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, দোকানদার, ইদের ব্যবসায় সারাবছরের ভাত মাছ এসব শ্লোগান তুলে চলমান লকডাউন অকার্যকর করতে জোরালো ভূমিকা রাখছেন তাদের নাম। এ-সব ব্যক্তিরা একবারও ভাবছে না যদি মানুষই না বাঁচে তাহলে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান পাট খোলা রাখলেও যে বেঁচা বিক্রি হবে না, অনেকটা বইমেলার স্টলগুলোর মতো। সরকারের সর্বোচ্চমহল, বিশেষজ্ঞ কমিটির নিষেধ সত্ত্বেও বইমেলায় বই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আর এক এক প্রকাশকের গলার জোরে, ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে বই মেলা করে এখন আবার তারাই সরকারের কাছে তাদের ক্ষতি পোষাতে প্রণোদনা সহায়তা চাই। কী সেলুকাস! লক ডাউন অকার্যকর করতে দোকানের ঝাপ আপ-ডাউন করে যারা দেদারসে ব্যবসা বাণিজ্য চালাচ্ছে তারাও একসময় আবার ক্ষতি পোষাতে প্রণোদনা সহায়তা চাইবে নিশ্চিত। বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় যেসব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা পূঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলে আমাদের সবাইকে ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে। তাই প্লিজ প্লিজ আসুন, আমরা সবাই ঘরে বসে থেকে আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করি। করোনার জীবাণু শূন্য না হলে কোনোভাবেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব হবে না।