ডন ডেস্ক:-
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের কেশবপুর – হাঁসদিয়া কাঁচা রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। কয়েকটি গ্রামের ৪০ থেকে ৫০ টি পরিবারের মানুষ এ রাস্তা দিয়ে উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াত করেন। তবে কয়েক বছর ধরে এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত শতাধিক বালু, মাটি, জ্বালানী ও ইট বোঝায় ড্রাম ট্রাক, ট্রলি, সেলোইঞ্জিত চালিত অবৈধ যান চলাচল করায় ধুলা ওড়ে। এতে কাঁচা রাস্তাটি যেমন আরও বেহাল হচ্ছে, তেমনি ধুলায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে আশেপাশের বাসিন্দাদের।
শীত বিদায়ের পর মৌসুমের এই সময়টায় এমনিতেও প্রকৃতি বেশ শুস্ক থাকে। দিনের বেলায় রাস্তা দিয়ে বালু, মাটি, জ্বালানী ও ইটবাহী গাড়ি গুলো যায়, তখন ধুলায় চারপাশ ঢেকে যায়। এতে আশেপাশের বাসিন্দাদের এ্যাজমা, হাপাঁনি, শ্বাসকষ্টসহ নানান রোগের উপক্রম বেড়ে যায়। ঘরবাড়ি, আসবাবপত্রসহ যাবতীয় জিনিসপত্র ধুলায় ময়লা হয়ে যায়, নষ্ট হয়। এছাড়াও রাস্তায় বড় বড় গর্ত হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। বড় ট্রাকের কারণেই মাঝেমাঝে বিদ্যুতের ক্যাবল গুলো ছিরে যায়। মিটার ভেঙে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়।
সরেজমিন গিয়ে এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, কয়েক বছর হল এই রাস্তার পাশে স্থানীয় প্রভাবশালী মনোয়ার হোসেন (মনো) ও সামছুল দুইটি অবৈধ ভাটা স্থাপন করেছেন। ভাটার কয়েক শত ড্রাম ট্রাক, ট্রাক, ট্রলি, লাটাহাম্বা এ কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। রাস্তা কাঁচা হওয়ায় গাড়ি চললে প্রচুর ধুলা ওড়ে। ধুলায় ঘরবাড়ি ময়লা হয়। আসবাবপত্র নষ্ট হয়। মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাঝেমাঝে বিদ্যুতের ক্যাবল ছেড়ে পড়ে। আরো জানা গেছে, প্রতিকার চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি।
এবিষয়ে ওই এলাকার ওহাব বলেন, এতদিন একটা ভাটা ছিল। কোন রকমে চলতাম। গত বছর জহুরা নামের আরেক ভাটা নির্মাণ হয়েছে। এবার আর চলায় যায়না। তিনি বলেন, ধুলা, বালি,গাড়ির শব্দে অতিষ্ট জীবন। এভাবে থাকা যায়। কিছু বললেই মারতে আসে। তিনি আরো বলেন, গতকাল বিকেলে (মঙ্গলবার ২০ এপ্রিল) মহিলাদের সাথে জহুরা ভাটা মালিকের খুব কথাকাটি হয়। নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী বলেন, ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী। কিছু বললেই মারার হুমকি দেয়। ভয়ে কেউ কিছু বলেনা। প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।এবিষয়ে জহুরা ভাটার মালিক সামছুল মুঠোফোনে বলেন, মাঝেমাঝে পানি দিই, ইট দিই। এবার বৃষ্টি না থাকায় ধুলা বেশি। সৈনিক ব্রিকসের মালিক মনোয়ার হোসেন (মনো) মুঠোফোনে উগ্র ভাষায় বলেন, রাস্তাটি সরকারি নয়, আমার জমিতে রাস্তা। যা মন তাই করেন! খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাস্তাটি সরকারি তালিকাভুক্ত। এই রাস্তায় রয়েছে কেশবপুর ইদগাহ ময়দান। এতথ্য নিশ্চিত করে ওই এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তার বলেন, রাস্তাটি সরকারি। এই রাস্তা দিয়ে ইদগাহে যায় মানুষ। আমি অনেক বলেছি ভাটা মালিকদের। কিন্তু ওরা শোনে না। এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (২১ এপ্রিল) দুর্ভোগের চিত্র ধারণ ও তথ্য সংগ্রহে ৬ জন পেশাদার সংবাদকর্মী। তারা টেলিভিশন, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তথ্য সংগ্রহে গেলে সৈনিক ব্রিকসের মালিক মনোয়ার হোসেন এর বখাটে ছেলে রুবেল সাংবাদিকের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অসৎ আচরণ করে লাঞ্চিত করেন। এবিষয়ে সৈনিক ব্রিকসের মালিক মনোয়ার বলেন, তেমন কিছু নয়,সাংবাদিকদের সাথে আমার ছেলের কথাকাটি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক সাংবাদিক বলেন, কেশবপুর বাসীর দুর্ভোগের খবর পেয়ে তথ্য সংগ্রহে যায় আমরা। গেলে সৈনিক ভাটা মালিকের ছেলে রুবেল অসৎ আচরন করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।