কুমারখালী প্রতিনিধি:-
আগামীকাল ১৭ ই মে। রোজ সোমবার। দাফনের ২৬ দিনপর কবর থেকে উঠানো হবে গৃহবধূ শিলা খাতুনের (৩২) লাশ। নিহত গৃহবধূ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামের আসাদ মুন্সী ওরফে উজ্জল (৩৫) এর স্ত্রী।রোববার (১৬ মে) সকালে এতথ্য নিশ্চিত করেন কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মজিবুর রহমান। ওসি বলেন, কোর্টের নির্দেশে আগামীকাল ( সোমবার) দাফনের ২৬ দিনপর কবর থেকে গৃহবধূ শিলার লাশ উঠানো হবে।
তিনি আরো বলেন,এরআগে লাশ দাফনের ৬ দিনপর (২৫ এপ্রিল) নিহতের ভাই হত্যার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শেষে গত ৩ মে সোমবার রাতে থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলা নং ৬। নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়,ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপাউপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আশরাফুল হোসেন মিয়া’র কন্যা শিলা’র সাথে প্রায় ১৪ বছর আগে উজ্জলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মোটা অংকের যৌতুক অথবা সেনাবাহিনীর চাকুরীর জন্য স্বামী উজ্জল, শ্বশুর ধুনা মুন্সী ও শ্বাশুড়ী মমতাজ বেগম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। এরপর গত গত ১৯ এপ্রিল বিকেল তিনটায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন গুরুতর অসুস্থ কথা জানায় শিলা’র মাকে। খবর পেয়ে শিলার মা ও দুই ভাবী ছুটে এসে শিলাকে অসুস্থ দেখতে পায়। এসময় শিলার মা, ভাবি ও স্বামী অটোযোগে প্রথমে কবিরাজ বাড়ির দিকে যায়। পথে শিলার অবস্থার আরো অবনতি হলে কুষ্টিয়া সদর হাসাপাতালের দিকে যায় অটো গাড়ি। হাসপাতালে যাওয়ার পথে বাঁশগ্রাম বাজার এলাকায় পৌছালে স্বামী উজ্জল পালিয়ে যায়।
স্বামী পালিয়ে যাওয়ার পর শ্বশুড় বাড়ির লোকজন পথের মধ্যেই আহত শিলা, শিলার মা, ভাবি ও অটো চালককে মারধর করে। এছাড়াও শিলাকে হাসপাতালে না নেওয়ার জন্য হত্যার হুমকি প্রদান করা হয়। হুমকি উপেক্ষা করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিলা মারা যায়।পরে শিলার লাশ নিয়ে ওর মা ও ভাবি শ্বশুড় বাড়ি পৌছায়।আরো জানা যায়, শিলা মৃত্যুর বিষয় পুলিশ ও স্বজনদের না জানানোর জন্য প্রথমে শিলার মা,ভাবি ও অটোচালককে মারধর করে। পরে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘরে জিম্মি করে রাখে। এখবর পেয়ে ২০ এপ্রিল ভোরে শিলার বাবা ও ভাই আব্বাস শিলা’র শ্বশুড় বাড়ি আসে এসময়র তাদেরকেউ ঘরে জিম্মি করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। কোন প্রকার সহযোগীতা না পেয়ে প্রাণভয়ে ২০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯ টায় বাঁশগ্রাম কবরস্থানে রক্তাক্ত লাশ দাফন করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন শিলা’র বাবারা। এরপর দাফনের ৬ দিন পর হত্যার অভিযোগ তোলেন স্বজনরা। যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী, শ্বশুড়, শ্বাশুড়ীসহ ৪/৫ জন মিলে তাকে পিটিয়ে ও শ্বাঃসরোধ করে হত্যা করা হয়। এমন অভিযোগ তুলে রোববার (২৫ এপ্রিল) রাতে থানায় লিখিত এজাহার দেন নিহতের ভাই আব্বাস মিয়া।
এবিষয়ে নিহতের বড় ভাই ও এজাহার দায়েরকারী আবু আব্বাস মিয়া বলেন, ১৪ বছর আগে উজ্জলের সাথে বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকা ও সেনাবাহিনীর চাকুরীর জন্য বোনকে ওরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। যৌতুকের টাকা না পেয়েই ওরা বোনকে হত্যা করেছে।
আবু আব্বাস মিয়া বলেন, নিরাপত্তার অভাবে কাউকে কিছু জানাতে পারিনি। পরে বাড়ি ফিরিয়ে আত্মীয়দের সাথে পরামর্শ করে ২৫ এপ্রিল রাতে কুমারখালী থানায় বিচারের আশায় অভিযোগ দিয়েছি। গত ৩ মে থানায় মামলা রুজু হয়। এবিষয়ে ঘাতক স্বামী আসাদ মুন্সী ওরফে উজ্জল বলেন, আমি কোনদিন বউকে মারিনি। আপনারা (সাংবাদিকরা) বিষয়টি ভুলে যান। আমার ভুল হয়েছে।