নিজস্ব প্রতিবেদক
কুষ্টিয়ায় মাস্ক পরা বাধ্যতামুলক নিশ্চিত করা ও করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সভা। সভায় যুক্ত ছিলেন কুষ্টিয়া পু্লিশ সুপার খাইরুল আলম, কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মিলন উল্লাহ, ছয় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) ও সরকারী অফিস প্রধানগণ।
জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির দুই ঘন্টাব্যাপী বৈঠক শেষে পহেলা জুন এই সিধান্ত হয়। সীমান্ত জেলা কুষ্টিয়ায় ঈদের পর থেকে হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। করোনার বিস্তার কমাতে কুষ্টিয়ায় রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বিপণী বিতান ও মার্কেটগুলোয় নেই সামাজিক দূরত্ব। অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক পরছে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি কুষ্টিয়াসহ দেশের সীমান্তবর্তী ৭ জেলায় লকডাউন ঘোষণার সুপারিশ করেন। সভার শুরুতেই কমিটির সদস্য সচিব ও কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন, ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় করোনা পরিস্থিতি খারাপ বলব না। তবে একটু বাড়তির দিকে। এ রকম পরিস্থিতি আগেও দুবার হয়েছিল। ঈদের কেনাকাটায় ভিড় দেখে আতঙ্কিত ছিলাম। ইদানীং করোনা পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ৩৮ করোনা রোগী ভর্তি। কোনো রোগীই উপজেলায় থাকতে চাইছেন না। জেনারেল হাসপাতালে চলে আসছেন। কারণ, এখানে অক্সিজেন সাপোর্ট বেশি। কিন্তু বেডের খুবই সমস্যা। বেডের সংখ্যা অতিশর্তে উন্নীত করা জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় ভারতফেরত তিনজন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যে নেগেটিভ হয়েছেন। অপরজন এখনো পজিটিভ।তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন।তিনি আরশীনগকে জানান, লকডাউন ঘোষণার ব্যাপারে আজ সকাল (ভার্চ্যুয়াল ) জুমমিটিং এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করে লকডাউন দেয়া হয়নি। মাস্ক পরা বাধ্যতামুলক নিশ্চিত করা ও করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির দু ঘন্টাব্যাপী বৈঠক শেষ এ সিধান্ত নেওয়া হয়। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, ইতিমধ্যে করোনার ভারতীয় ধরন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই অবহেলা না করে কার্যকর লকডাউন দিতে হবে।গত ৪ দিনে করোনা পজিটিভ হয়েছেন ১০২ জন। করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ১১৩ জন। গত তিন দিনে তিনজন মারা গেছেন। কুষ্টিয়ায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৯৭৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সভায় কুষ্টিয়া পু্লিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি শুধু মুখে নয় বাস্তবে মানতে হবে। কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে শহরে সবচেয়ে করোনা উর্ধ্বমুখী। আগামীকাল থেকে কঠোর অবস্থানে যাবে জেলা পু্লিশ। বিশেষ করে শহরের প্রতিটি প্রবেশ মুখে পরিবহন চেক করা হবে। চালকের মাস্ক না থাকলে গাড়ী সাইডে রাখা হবে। যাত্রীদের মাস্ক না থাকলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। যাতে কেউ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াতে না পারে। অনেকে নিজেরাই সিএনজি উল্টিয়ে, রিক্সা, অটো রিক্সা মাটিতে ফেলে পুলিশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে। আর কতিপয় ব্যক্তি সত্য, মিথ্যা যাচাই না করে তা সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে তুলে ধরে। পু্লিশ সুপার আরও বলেন, কুষ্টিয়ার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, করোনা প্রতিরোধসহ সার্বিক বিষয়ে জননেতা মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি স্যার আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তিনি শুধু কুষ্টিয়ায় নয়, সারা বাংলাদেশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সভার শেষের দিকে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানোর ওপর জোর দেন।বেশি বেশি পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের হার সম্পর্কে ধারণা পেতে হবে। যেসব এলাকায় শনাক্ত বেশি দেখা যাবে, সেসব এলাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সবার মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়াসহ জনসাধারণকে সচেতন করতে সব ধরনের সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কথা বলেন সাইদুল ইসলাম। কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনাকালীন এই দুঃসময়ে আসুন আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে এক সাথে, একযোগে কাজ করি ভারত থেকে শত শত মানুষ প্রবেশ করছেন জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে। তাদের কোনো করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না অথচ তারা সীমান্ত এলাকায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।তিনি আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসন সির্ভিল সার্জন ও প্রতিনিধিদের মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কুষ্টিয়ায় লকডাউন এ মুহুর্ত দেওয়া দরকার নেই।যার কারনে কুষ্টিয়ায় লকডাউন হচ্ছে না।
এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন সির্ভিল সার্জন ও প্রতিনিধিদের বৈঠক করে লকডাউনের ব্যপারে স্থানীয় ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।যার কারনে আজ সকাল ১১ টার জুমমিটিং এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করে লকডাউন না দেওয়ার এ ঘোষণা দেওয়া হয়।