নিজস্ব প্রতিনিধি:-
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের টোলরেট চার্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইচ্ছামত শিলাইদহ খেয়াঘাটের ইজারা গ্রহণকারী কর্তৃক মাত্রা অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। এ কারণে পারাপারের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শিলাইদহ খেয়াঘাটের যাত্রীদের থেকে তিন চার গুণ হারে টোল আদায় করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ সমূহের ২০১১ সালের অনুমোদিত টোলরেট অনুসারে খেয়াঘাটের জন্য যে টোল নির্ধারণ করা আছে সে টোলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জোরপূর্বক ইচ্ছামত টোল আদায় করছে শিলাইদহ ঘাট ইজারা গ্রহণকারীরা।
শিলাইদহ-চরসাদীপুর খেয়াঘাটে (২-৫ কিমি:) যন্ত্র চালিত নৌকায় মানুষের পারাপারের জন্য জনপ্রতি ৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়ে থাকলেও সেখানে জনপ্রতি ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া খালি ভ্যান প্রতিটির জন্য ১০ টাকার স্থানে ১শ টাকা, মাল ভর্তি ভ্যান ১৫০ টাকা, মোটরসাইকেল প্রতিটি ১০ টাকার স্থানে ৩০ টাকা, করিমন প্রতি ১শ থেকে ১৫০টাকা। এছাড়া অন্যান্য জিনিস পারাপারের ক্ষেত্রে যে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে তার থেকেও তিন থেকে চার গুণ বেশি হারে টোল আদায় করা হচ্ছে। শিলাইদহ খেয়াঘাটের ইজারা পাওয়ার অন্যতম শর্ত অনুসারে স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদেরকে বিনামূল্যে পারাপার নিশ্চিত করার শর্ত থাকলেও একেবারেই মানা হচ্ছে না সেই শর্ত। ছাত্র-ছাত্রীদের থেকেও জোরপূর্বক টোল আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া জেলা পরিষদ সহ অন্যান্য সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের গাড়ি বিনামূল্যে পারাপারের কথা থাকলেও সেটিও মানছেন না ইজারা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ। অনুমোদিত টোলরেট চার্ট জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে সহজে দর্শনীয় জায়গায় নোটিশবোর্ড আকারে ইজারাদার কর্তৃক প্রদর্শন নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ থাকলেও শিলাইদহ খেয়াঘাটে টোলরেট চার্ট প্রদর্শন করা হচ্ছে না। তাছাড়া ইজারা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ টাকা প্রাপ্তি স্বীকার কোন রশিদও দিচ্ছেন না। শিলাইদহ খেয়াঘাটের টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা মাল্লা ও আক্কাস জানায়, প্রতিদিন এই খেয়াঘাট দিয়ে দুই হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে। তাছাড়া দুই থেকে আড়াইশ মোটর সাইকেল পারাপার হয়ে থাকে এই ঘাট দিয়ে। তথ্যের ভিত্তিতে হিসাব করে দেখা যায়, প্রতিদিন ১৫শ জন মানুষের যাতায়াত টোল বাবদ আদায় হয় ১৫০০ জন দ্ধ৩০/-=৪৫,০০০/-, মোটর সাইকেল পারাপার বাবদ ২৫০জন দ্ধ ৩০/-=৭,৫০০/-, সর্বমোট প্রতিদিন টোল আদায় ৫২,৫০০/-। এই হিসাব ধরে বছর শেষে ৩৬৫ দিনে টোল আদায় ৫২,৫০০/-দ্ধ ৩৬৫ দিন= ১,৯১,৬২,৫০০/-। তাছাঢ়া ভ্যান করিমন সহ অন্যান্য মালামালের টোল আদায় করে থাকে খেয়াঘাট ইজারা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ শিলাইদহ খেয়াঘাট ১(জুলাই-জুন) বছরের জন্য ইজারা দিয়েছেন ৭০ লক্ষ টাকায়। বছরে এই খেয়াঘাট থেকে ইজারা গ্রহণের টাকা বাদ দিয়ে ইজারা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ লাভ করছেন ১,২১,৬২,৫০০/-। এদিকে শিলাইদহ খেয়াঘাটের ইজারা গ্রহণকারী আশরাফ আলীর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।বিষয়টি নিয়ে কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতিপূর্বে আমি বিষয়টি জানতাম না। আমি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ কুষ্টিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মো: মনিরুজ্জামান জানান, সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত টোল পুনঃনির্ধারণ না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ সরকারি নির্ধারণকৃত টোলের বাইরে অতিরিক্ত টোল আদায় করতে পারবে না। সরকার নির্ধারিত টোলের বাইরে কোন ইজারাদার যদি অতিরিক্ত টোল আদায় করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অনুমোদিত টোলরেট অনুযায়ী টোল আদায় নিশ্চিত করতে হবে এবং অনুমোদিত টোলরেটের চেয়ে অতিরিক্ত আদায় প্রমাণিত হলে জরিমানা সহ ইজারা বাতিল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার শর্ত ইজারা গ্রহণ করার শর্তে যুক্ত থাকলেও ইজারা গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ সেসব শর্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের নির্ধারণ করা টোলরেট জনসাধারণের উপরে জোরপূর্বক চাপিয়ে দিয়ে অর্থ আদায় করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পারাপার হওয়া যাত্রীসাধারণ। সেই সাথে ইজারা গ্রহণকারীর কঠিন শাস্তির চেয়ে জেলা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
এই ব্যাপারে এলাকাবাসী জানান, শিলাইদহ ঘাটে রয়েছে একটি স্বসস্ত্র বাহিনী। তারা জোরপূর্বক ঘাটে ইজারা আদায় করে। কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাইনা।