সেলিম রেজা বাচ্চু:-
শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী,আবাসিক এলাকায় রাত ৯ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু উল্টো চিত্র কুষ্টিয়ায়। রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে কুষ্টিয়া শহরের সাদ্দাম বাজারস্থ কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনে দিয়ে বয়ে চলা মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আতাউর রহমান কে মোবাইল মারফত কল করে জানতে চাওয়া হল -এই মুহূর্তে আপনার অফিসের নিচে শব্দের মাত্রা কত ডেসিবেল? প্রথমে গাড়ীর হর্ণের শব্দে স্পষ্ট শুনতে পেলেন না। প্রতিবেদকের ৫ বার চেষ্টার পর তিনি বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, অডিওমিটার যন্ত্র দিয়ে মাপতে হবে। তবে অনুমান করে বলতে গেলে ৯০ ডেসিবেলের বেশী হবে। শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ২ টা সেমিনার আয়োজন ও ৫টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে এবং তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। একই স্থান থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ ক্লাবের সভাপতি রাশেদুল বিপ্লব কে মোবাইল মারফত এ বিষয়ে জানানো হলো -কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনে শব্দের মাত্রা ৯০ এর উপরে। একথা শুনেই চমকে উঠেন তিনি। বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন-বাতির নিচেই অন্ধকার! পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশের ভবনেই একতা ক্লিনিক। ৩০০ ফিট এগিয়ে গেলেই কুষ্টিয়া জিলা স্কুল। সরকার ঘোষিত নিরব এলাকায় যন্ত্রদানবের হুঙ্কার। জিলা স্কুলের পড়ুয়া অন্তু জানান,হর্ণের শব্দ শুনলে বুক ধড়ফড় করে। ক্লাসে স্যারের কথা শুনতে পাইনা। হাইড্রোলিক হর্ণ,নির্মাণ যন্ত্রাংশ ,শিল্প- কারখানার যন্ত্র,বাদ্যযন্ত্রসহ বিভিন্ন উৎস থেকে উচ্চমাত্রায় শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বজুড়ে শুধু বিনোদনের জন্য যে মাত্রার শব্দদূষণ সৃষ্টি হয়,সেই দূষণের শিকার ১২-৩৫ বছর বয়সী এমন কিশোর-তরুণেরা থাকেন, তাদের সংখ্যা ১১০ কোটি। তারা সবাই বধির হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপ অনুযায়ী, মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল সদর হাসপাতাল,সনো টাওয়ার,পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে,শব্দ দূষণজনিত কারণে হার্টের অসুস্থতা,আলসারসহ বিভিন্ন রোগের উপসর্গ নিয়ে আগত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে গর্ভকালীন ঝুঁকি বাড়ছে। বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা বিশ্লেষণ করলেই এই চিত্র স্পষ্ট হয়ে যায়। কুষ্টিয়ায় শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
উপদেষ্টা: বেলাল আহাম্মেদ, প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাহিদুল হক ডন, বার্তা সম্পাদক : যাবির মাহমুদ
সম্পাদকীয় কার্যালয়: মঙ্গলবাড়িয়া বাজার, কুষ্টিয়া।
মোবাইল : ০১৭১২-৮১৪০৫৯,ইমেইল : thedonnews24@gmail.com।
ই-পেপার কপি