ডন ডেস্ক:-
কুষ্টিয়ায় দীর্ঘদিন থেকে রামরাজত্ব চালিয়ে আসছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি।এককভাবে ব্যবসা করায় এরা কাউকে তোয়াক্কা করেনি। তবে গত বছর থেকে পাল্লাদিয়ে মাঠে নেমেছে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি। এ কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট নতুন নতুন কৌশল করে তামাক চাষীদের মন জয় করার চেষ্টা করে চলেছে। এ বছর তারা তামাক ক্রয় করে অনেকটাই সফলও হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক’জন কর্মকর্তা। এ বছর গত ২৪ এপ্রিল থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বিশাল টার্গেট নিয়ে তামাক ক্রয় করতে মাঠে নেমে শেষ পযন্ত অনেকটা ব্যর্থ হয়েছেন। গত বছরের পচাঁ তামাক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে উচ্চদরে ক্রয় করেও টার্গেট পূরণ করতে পারেননি আনেক তামাক ক্রয় কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তারা তামাক ক্রয় করার শুরুতেই তামাক চাষীদের তামাকের ন্যায্য মূল্য না দিয়ে জোরপূর্বক চাষীদের নিকট থেকে তামাক ক্রয় করেন। এ ঘটনাগুলোর চিত্র কুষ্টিয়ার জগতি চেঁচুয়া লীফ রিজিওনের বাইংকোর্ট সিসি ক্যামেরায় এখনোও বন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তামাক চাষীরা। বিশেষ করে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েছেন ৩ নম্বর বাইংকোর্টের ক্রয় কর্মকর্তা সিলেটে থেকে আগত এক কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে চাষীদের সাথে খারাপ আচারণ, ওজনে কম দেয়া ও তামাকের সবচেয়ে কম মূল্যদিয়ে জোরপূর্বক তামাক ক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। এত ঘটনার পরেও ঋণের কারনে বাধ্য হয়ে এ বছর অনেকেই ওই কোম্পানিতে তামাক বিক্রয় করতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যান্য চাষী ও তামাক ব্যবসায়ীরা জাপান টোব্যাকোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তামাক বিক্রয় করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন তামাক চাষী জানান, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি তাদের কৌশল অনুযায়ী দরিদ্র কৃষকদের তামাকের বীজ, চারাগাছ, জৈবসার তৈরি ও ঋণদিয়ে চাষীদের জিম্মি করে রাখে। এ ছাড়াও তারা তামাক চাষে উৎসাহ দেখিয়ে চাষীদের ম্যানেজ করে থাকেন। তামাক চাষীরা এ সকল সহায়তা পেয়ে তামাক চাষে আগ্রহী হয়। বিশেষ করে শর্তসাপেক্ষে ঋণের সুবিধা পেয়ে তারা তামাক চাষ করেন। পরবর্তীতে তাদের চাষ করা তামাক শর্ত অনুযায়ী বিএটি কোম্পানির নিকট বিক্রয় করে ঋণ পরিশোধ করেন। তবে এ বছর তামাক ক্রয় কর্মকর্তারা চাষীদের সাথে খারাপ আচারণ, ওজনে কম দেয়া ও তামাকের সবচেয়ে কম মূল্যদিয়ে জোরপূর্বক তামাক ক্রয়সহ চাষীদের হুমকি ধামকি দেয়ায় চাষীরা ক্ষোভে তাদের অধিকাংশ তামাক জাপান টোব্যাকো ও ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেন। যার কারনেই বিএটি’র ক্রয় কর্মকর্তারা তাঁদের তামাক কেনার টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। শেয পর্যায়ে তারা তাদের চাকুরী রক্ষা করতে তামাক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে উচ্চদরে গত বছরের পুরাতন ও পঁচে যাওয়া তামাক ক্রয় করেও তারা তাদের টার্গেট পূরণ করতে পারেননি। তারপরও বেশ কয়েকজন ক্রয় কর্মকর্তা তাদের টার্গেট পূরণ করতে ব্যর্থ হন। এ ঘটনার পর নিজেদের দোষ আড়াল করতে বেশ কয়েকজন এফ টিকে তাদের টার্গেট পূরণে সক্ষম না হওয়ার বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়। তাদের মধ্যে প্রান্ত নামের এক এফ টিকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাইং চলাকালে তাদের ক্রয়কৃত গত বছরের পুরাতন তামাক ও পঁচা তামাক গুলো চেচুঁয়ার হ্যান্ডেলিং সেডে তড়িঘড়ি করে বাছাই করা পঁচা তামাক রাতের আঁধারে মাটিতে পুঁতে রাখেন বি এ টির শ্রমিকরা। এখনোও অবশিষ্ট পুরাতন তামাক চেচুঁয়া লিফ রিজিওনের ৬ নম্বর গোডাউনের একটি অংশে গোপনীয় ভাবে কিছু কৌশল করে রাখা হয়েছে। ওই তামাকের বেল গুলোর দুইপাশে ভালো তামাক দিয়ে খারাপ তামাক গুলোকে ঢেকে রাখা হয়েছে। এতে সহজে কেউ বুঝতেই পারবেনা ওই তামাক গুলো পঁচা
এদিকে বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগি তামাক চাষীদের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, এই কোম্পানির নিকট থেকে ঋণ নেয়া ছাড়াও তামাকের বীজ, চারাগাছ, জৈব সার উৎপাদনসহ বিভিন্ন ভাবে সহায়তা পাওয়ার কারণে আমরা কোম্পানির নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছি। তবে এবার ভুট্টা চাষ করে অনেক কৃষক ভাল মুনাফা অর্জন করেছে। আমরাও আগামী বছরে তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।