ডন ডেস্ক:-
কুষ্টিয়ায় সরকারি অর্থে জলমহলসহ বিভিন্ন এলাকায় জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে পুকুর পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ যেন পুকুর খনন করতে গিয়ে ‘সাগর চুরির’ ঘটনা! শুধু তাই নয়, সরকারি জমিতে জলাশয় সংস্কারের নামে ২০২০-২১অর্থ বছরের নেওয়া অনাপত্তিপত্র সনদ দিয়েই জালজালিয়াতির মাধ্যমে চলতি ২০২১-২২অর্থবছরের নতুন প্রকল্প দেখিয়ে সেই প্রকল্পের টাকাও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে লোপাট করা হয়েছে। আর যা ঘটেছে সবই জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের তেলেসমাতিতেই। নামমাত্র খনন, মনগড়া পিআইসি কমিটি করে খননের কাজ না করেই জেলা মৎস্যের উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহমেদ প্রকল্পের অর্থ পকেটে ভরেছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা ইউনিয়নে রিকাতের পুুকুর খনন জন্য ৬লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়।খনন কাজের পিআরসি রিকাত কে জানতে দেয়নি তার পুকুরের বরাদ্দ পরিমান কত। পিআইসি রিকাত কে পাশ কাটিয়ে সোহেল নিজের স্বপন নামে এক ঠিকাদারকে নামমাত্র খনন করে পুরো অর্থ লুটপাট করে নিয়েছে বলে কাজের পিআইসি জানায়।এই প্রতিবেদকের কাছে পিআইসি রিকাত বলেন আমার পুকুর খনন জন্য সরকারি ভাবে ছয় লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে ব্যাংকে সই করতে গেলে আমি জানতে পারি। খনন কাজের পিআইসি আমি আমাকে কাগজে সই করিয়ে নিয়ে নামমাত্র ২ লক্ষ টাকার কাজ করে পুরো অর্থ উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেল আহমেদ ও ঠিকাদার স্বপন ব্যাংক থেকে পুরো ৬ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছে। তারা আমার পুকুর কোন রকম খনন কাজ শেষ করে পালিয়ে যায় বলে পিআইসি জানান। উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেলের সকল কু-কর্মের সাথে জড়িত আছেন কুষ্টিয়া জেলা মৎস কর্মকর্তা নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। সরকারি অর্থে পুকুর খননের জন্য কাগজে-কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইসি) কমিটি গঠন করা হয়। বাস্তবে এসব কাজ বাস্তবায়ন করেন জেলা মৎস্য অফিসার নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও একই অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেল মিয়া। এতেই থেমে থাকেননি সোহেল মিয়া। নানা কারসাজির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাত করতেও নিজেই দালাল চক্র সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি নিজেই। অভিযোগ উঠেছে, কুষ্টিয়ার একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রকল্প আসার আগেই প্রকল্প পাইয়ে দিতে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন এই উপপ্রকৌশলী সোহেল। এদিকে প্রকল্প পাইয়ে দিতে যাদের কাছ থেকে অগ্রিম লক্ষ লক্ষ টাকা উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেল নিয়েছে তারা কোন প্রকল্প না পাওয়ার ঐ ব্যক্তিরা কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য অধিদপ্তর এসে তান্ডব চালালেও কেউই কোনো প্রতিবাদ করেননি। অফিস ও তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রকৌশলী সোহেল মিয়াকে দেওয়া হয়েছে বাড়তি দায়িত্ব। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই বিভিন্নভাবে এসব টাকা লুটপাট করেছেন তিনি। নামমাত্র কাজ করে পিআইসি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে বরাদ্দ হওয়া অর্থের ব্যাংক চেক সই করে নিয়ে সেই টাকা নিজেদের পকেটে ভরছেন তারা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলার চার উপজেলায় এর মধ্যে দৌলতপুর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় মাছচাষ বাড়াতে পুকুর খননের জন্য বরাদ্দকৃত ১কোটি ৮৫ লক্ষেও বেশি টাকা এভাবেই লুটপাট করেছেন কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য অফিসের এই দুই কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গুলোর পিআইসি কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহ জেলায় থাকাকালীনও প্রকৌশলী সোহেল মিয়ার বিরুদ্ধেও উঠেছিল নানান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেল মিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কলটি রিসিভ করেননি। কুষ্টিয়ার জেলা মৎস্য অফিসার নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন,সোহেল এর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। কিন্তুু আমার কিছুই করার নেই আমার হাত-পা বাধা। আমি এর বেশী কিছু বলতে পারবো না।আর কাগজে কলমে সবই ঠিকঠাক আছে । ভুল ধরার সুযোগ নেই। আমার উপরের সব কর্মকর্তাসহ সবাইকে ম্যানেজ করে আমি কাজ করি। দুর্নীতি নিউজ না করে তাদের পক্ষে খবর প্রকাশ করতেও পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।( চলবে)