ডন ডেস্ক:-
জ্বালানি সাশ্রয়ে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে ৩ দিন বন্ধ এবং ‘কার হলিডে’ করার মতো পদক্ষেপও থাকতে পারে। এছাড়া রাজধানীসহ সারাদেশে বড় বড় শপিংমল পালাক্রমে (বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী) খোলা রাখার কথাও চিন্তা করছে সরকার। বর্তমানে রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে অকটেন-পেট্রলের দাম আবার বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই এ ব্যাপারে সরকারি ঘোষণা আসতে পারে। এর মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি ভর্তুকি কমিয়ে আনতে চায় সরকার। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার মাধ্যমে সরকারের প্রত্যাশিত সাশ্রয় হচ্ছে না। বিপিসি থেকে জ্বালানি বিভাগকে জানানো হয়েছে, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সাশ্রয়ের মাধ্যমে মোট জ্বালানি তেল ব্যবহারের মাত্র সাত থেকে আট শতাংশ জালানি সাশ্রয় হয়। দেশে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়, বিশেষ করে ডিজেল ব্যবহার হয়, তার ৯০ শতাংশই ব্যবহার হয় পরিবহন খাতে। ফলে সরকার পরিবহন খাতে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল কমিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সরকার আপাতত অকটেন এবং পেট্রলের দাম একটু বেশি পরিমাণে বাড়াতে চায়। অর্থাৎ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিদেশ থেকে যে দামে অকটেন আমদানি করে, দেশের বাজারে তার কাছাকাছি মূল্য নির্ধারণ করতে চায় সরকার। এতে ভর্তুকির পরিমাণ কমে আসবে। তিনি বলেন, অকটেন মূলত ধনীরা ব্যবহার করে। ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ দামি গাড়িতেও অকটেন ব্যবহার হয়। ফলে অকটেন এবং পেট্রলের দাম বাড়ানো হতে পারে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গাড়িতে ২০ শতাংশ জ্বালানির ব্যবহার কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিজেল যেহেতু কৃষি সেচ কাজ এবং সাধারণ মানুষ বেশি ব্যবহার করে, ফলে আপাতত ডিজেলের দাম নাও বাড়তে পারে। তবে ডিজেলের দামও বাড়বে আরও কিছুদিন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণের পর। এদিকে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পরিবহন খাতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সরকার বেশ কিছু বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ রাখা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ায় ব্যক্তিগত গাড়ির সর্বোচ্চ ব্যবহারও নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ রাখলে গাড়িতে জালানি তেলের ব্যবহারও কম হবে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে। কোভিডের কারণে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এর মধ্যে আবার বন্ধ রাখলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ ধরনের সুপারিশ করব। বাকিটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সপ্তাহে তিন দিন বাসায়ও শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ রাখলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। জ¦ালানি বিভাগ আরও যেসব বিষয় নিয়ে ভাবছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদেশের আদলে কার হলিডে দেওয়া। অর্থাৎ সপ্তাহে একদিন গাড়ি বন্ধ রাখা। সেটা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, অনেক দেশেই একদিন জোড় নাম্বারের গাড়ি চলে, বিজোড় নাম্বার আরেকদিন। সেই রকম চিন্তা থেকেই কার হলিডের বিষয়টি আসছে। এতে প্রতিদিন অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় চলা কমে যাবে। তবে পরিবহন সংকটে মানুষের চলাচলে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সেদিকও ভাবা হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, অপ্রয়োজনে মানুষের চলাফেরা কমিয়ে আনার কথাও ভাবা হচ্ছে। যেটা কয়েক দফা করা হয়েছিল দেশে করোনা ভাইরাসের মহামারী শুরু হওয়ার পর। বিশেষ করে জরুরি কারণ ছাড়া মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হবে। সপ্তাহে একদিন ছুটির দিনে পেট্রল পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। তবে সপ্তাহে একদিন পেট্রল পাম্প কী প্রক্রিয়ায় বন্ধ রাখা হবে, তার কৌশল নিয়ে ভাবছে জ্বালানি বিভাগ। বিশেষ করে মহাসড়কে যেসব পেট্রল পাম্প আছে, সেগুলো চালু রেখে শহরকেন্দ্রিক পেট্রল পাম্প সপ্তাহে একদিন বন্ধের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে সপ্তাহে একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখলে কী পরিমাণ জ্বালানি সাশ্রয় হবে, সেটা নিয়েও ভাবা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক এই সিদ্ধান্ত চালু করা হতে পারে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, আমরা কিছু প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়েছি। সেগুলো নিয়ে ভাবা হচ্ছে। একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখলে কী ধরনের ফলাফল আসতে পারে, সেটা নিয়েও বিপিসি কাজ করছে। বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, মোট কথা যে কোনোভাবেই হোক জ্বালানি সাশ্রয় করতে হবে। মানুষের কাছে আমার আহ্বান থাকবে নিজ থেকে যতটা পারেন সাশ্রয়ী হোন। এখন একটা সংকটকালীন সময়। সারা বিশ্বে সেটার প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে আমরা সবাই যদি সাশ্রয়ী হই তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারব।