ডন ডেস্ক:-
কুষ্টিয়ায় আবারও এনআইডি জালিয়াতি। কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রধান শিক্ষক জেবুন্নেছা সবুজের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত পরিচ্ছন্নকর্মীর চাকরি এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন উত্তোলন করছেন। বিষয়টি কুষ্টিয়া জেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে কিছুই জানেন না স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নিয়োগকালীন সভাপতি আসগর আলী। অথচ তিনি নিয়োগ বোর্ডের অন্যতম সদস্য এবং তার রেজুলেশন ছাড়া নিয়োগ বোর্ড গঠন কিংবা নিয়োগ প্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বেআইনী। তাকে না জানিয়ে এই নিয়োগ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে চাকরিপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, চাকরি বিধি অনুযায়ী বয়স হতে হবে ৩৫ বছর। কিন্তু তার বয়স ৩৭ হওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাকে বলেন বয়স ঠিক করে আনো। এর পরেই তিনি বয়স পরিবর্তনের জালিয়াতির পথ বেছে নেয়। কুষ্টিয়া পৌরসভায় ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে তার জন্ম তারিখ, সুরক্ষায় তার টিকা কার্ডের বয়স এবং জেলা নির্বাচন অফিসের সার্ভারে তার জন্ম তারিখ প্রদর্শিত হচ্ছে ০১/০১/১৯৮৫। অথচ চাকুরী ক্ষেত্রে সে ব্যবহার করেছে ০১/০১/১৯৯০ এর একটি জাল জাতীয়পত্র। ন্যাশনাল আইডি কার্ড টেম্পারিং করে বয়স কমিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরিচ্ছন্ন কর্মী পদের চাকরি প্রদান। কুষ্টিয়া কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ন্যাশনাল আইডি কার্ডকে টেম্পারিং করে বয়স কমিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চাকরি প্রদান করেছেন এক পরিচ্ছন্ন কর্মীর। মূল সার্ভারে বয়স সঠিক থাকলেও প্রদর্শিত আইডি কার্ডের বয়স কমানো হয়েছে ৫ বছর। মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক স্কুলে চাকরি দিয়েছেন ওই পরিচ্ছন্ন কর্মীর, এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে বিদ্যালয়ে তুলকালাম হলেও স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছে সব ঠিক আছে। স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, ডিজির প্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন তারা জানতেন না ন্যাশনাল আইডি টেম্পারিং করা হয়েছে। কুষ্টিয়া কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ন্যাশনাল আইডি ট্রেম্পারিং করে ৫ বছর বয়স কমিয়ে চাকরি দেয়া হয়েছে পরিচ্ছন্ন কর্মীকে। হরিজনসহ একাধিকজন চাকরি প্রত্যাশী থাকলেও গোপন সার্কুলারে নিয়োগ দেয়া হয়েছে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের আস্থাভাজন চায়না খাতুনকে। চায়না খাতুন জানান, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগের নিয়মবহির্ভূত বয়স সীমা অতিক্রমকারীকে চাকরিতে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জেবুন্নেছা সবুজ। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জেবুন্নেছা সবুজ বলেন, আমি অনেক কিছু করতে পারি।
এদেশে পুলিশের চাকুরি থেকে শুরু করে ভুরি ভুরি অনিয়ম হচ্ছে। সামান্য এক দেড় বছর বয়সের ব্যবধান তেমন কিছু না। নিয়োগ প্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন কর্মী বলছেন, তিনি শুধু চাকরি পাওয়ার জন্য তার ন্যাশনাল আইডি কার্ডে টেম্পারিং করে বয়স কমিয়েছেন, তবে প্রধান শিক্ষকের পরামর্শে এগুলো করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে অভিযোগকারী বলেন, নিয়োগ সার্কুলার গোপন করে বয়স সীমা অতিক্রমকারীকে টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক কেন নিয়োগ প্রদান করলেন এর জন্য ওই শিক্ষকের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন তিনি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একরামুল হক সরকার বলেন, এই নিয়োগের সাথে জড়িত সকলেই চাকরি যাওয়ার মতো অপরাধ করেছেন।তাদের চাকরি দেওয়ার আগে আইডি কার্ডসহ প্রত্যেকটি কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেওয়া উচিত ছিলো। কুষ্টিয়া জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার বলেন, কেউ যদি ন্যাশনাল আইডি কার্ডে টেম্পারিং করে তাহলে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন এর জন্য বিচার হওয়া উচিত। কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২/৩ বছর ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের এক ছেলে কর্মরত ছিলো। অথচ নিয়োগের সময় তাকে নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। তার বয়স চাকরিবিধির মধ্যে থাকলেও কেন এবং কি কারণে তাকে বাদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক বয়স বাদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক বয়স অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বেছে নিলেন? কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের মানুষ বিষয়টি দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক জেবুন্নেছা সবুজের স্বামী ব্যাংকে জাল সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় চাকরি হারিয়েছেন এবং,কারাবরণ করেছেন।