ডন ডেস্ক:-
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে দুর্বৃত্তদের হামলায় দুই এএসআই নিহতের ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি ধরতে গিয়ে আবার হামলার শিকার হয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কালোয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ ও ইউপি সদস্যদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় কুমারখালী থানায় করা দুই মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে প্রতিপক্ষের হামলায় আসামি পক্ষের তরুন শেখ (৪৫) নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশ কোনো তথ্য পায়নি বলে জানিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার ভোরে বেড় কালোয়া এলাকার দুর্বৃত্তদের হামলায় নৌকা থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে কুমারখালী থানার এএসআই সদরুল আলম ও মুকুল হোসেন নিখোঁজ হন। পরে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কুমারখালী থানার এসআই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় ইয়ারুল শেখসহ ৮ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। একই ঘটনায় কয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ছানোয়ার হোসেন সেলিম বাদী হয়ে ৩৭ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে কুমারখালী থানায় আরেকটি মামলা করেন। দুটি মামলাতেই আরও ২০–২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, পুলিশের করা মামলায় প্রধান আসামি ইয়ারুলের সহযোগী মাহাবুল বেড় কালোয়া গ্রামের কুদু শেখের বাড়িতে পালিয়ে ছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাবেক ইউপি সদস্য খালেকের লোকজন তাঁকে পুলিশকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ওই বাড়ি থেকে জোর করে নিয়ে যান। এ সময় কুদু শেখের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। রাতে পুলিশ ওই এলাকায় গেলে আসামি পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ পাল্টা শটগানের গুলি ছুড়ে। এ সময় প্রতিপক্ষ খালেকের লোকজন আসামি পক্ষের তরুন শেখকে হাতে-পায়ে গুলি করে। স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ইয়ারুল শেখ ও সাবেক ইউপি মেম্বর খালেক গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। গত সংসদ নির্বাচনের পর দিন ভোরে আওয়ামী লীগের বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফের সমর্থক খালেক মেম্বার গ্রুপের লোকজনের হামলায় পরাজিত নৌকার প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জের সমর্থক ইয়ারুলের ভাই জিয়ার নিহত হন। তখন ওই হত্যা মামলায় খালেক মেম্বারসহ তার ছেলেদের আসামি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ তরুন বলেন, ‘একজন মানুষ জানের ভয়ে আমার চাচার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। অথচ খালেক মেম্বারের দুই ছেলে রিপন ও শিপনের নেতৃত্বে প্রায় ২০ জন তাকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। বিষয়টি নিয়ে বাধা দিলে মেম্বারের ছেলেরা আমাদের রাতে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। রাত আনুমানিক ২টার দিকে ৭ থেকে ৮ জন বাড়িতে ঢুকে আমার চাচাতো ভাই সোহানকে মারধর করতে থাকে। এ সময় চিৎকার শুনতে পেয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার হাতে ও পায়ে একজন শটগান দিয়ে ৫ রাউন্ড গুলি করে। আমি খালেক মেম্বারের দুই ছেলে রিপন, শিপন এবং স্থানীয় লিটন, জাহাঙ্গীর ও সেলিমকে চিনতে পেরেছি। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক তাপস কুমার সরকার বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় ওই এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার হাতে ও পায়ে গুলি লেগেছে। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয় পুলিশ। এ সময় আত্মরক্ষার্থে আমরাও ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়েছি। হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়। আলাদা মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে গুলিবিদ্ধের ঘটনা জানা নেই দাবি করেন ওসি বলেন, এটি আলাদা কোনো ঘটনা হতে পারে।