নিজস্ব প্রতিনিধি:-
কুষ্টিয়ায় বিএনপি কর্মী সুজন মালিথাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাকে কুষ্টিয়ার আদালতে নেওয়া হয়। গত ২৪ তারিখ সিলেট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। উপ-পুলিশ কমিশনার তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত ছিলেন। এর আগে ২০১৯ সালে তানভীর কুষ্টিয়ায় পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেসময় জামায়াত বিরোধী বক্তব্য, নির্বাচন চলাকালীন দায়িত্বরত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দুর্ব্যবহার এবং সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তিনি বেশ আলোচিত হয়ে উঠেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়।
তানভীর আরাফাতের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, সাবেক এসপি তানভীর আরাফাতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিএনপি কর্মী সুজন হত্যাসহ ২টি মামলা রয়েছে। নিহত সুজন মালিথা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের ইসমাইল মালিথার ছেলে। মামলার বাদী সুজন হোসেন কুষ্টিয়া শহরের মিললাইন এলাকার লালন শাহ সড়কের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের সাথে ক্রসফায়ারে সদর উপজেলার টাকিমারা এলাকার বিএনপি কর্মী সুজন মালিথা নিহত হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিহত সুজনের রাজনৈতিক বড় ভাই একই এলাকার সুজন হোসেন (৪২) বাদী হয়ে ওই ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তৎকালীন পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাতকে প্রধান আসামী এবং কুষ্টিয়া মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন, কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে বাদী সুজন হোসেন উল্লেখ করেন, বিএনপির কর্মী সুজন মালিথা নিয়মিত বিএনপির বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত থেকে নেতা কর্মীদের উৎসাহ প্রদান করতো। যার কারণে আসামিদের কাছে সুজন মালিথা শত্রু হিসেবে পরিণত হয়। যার কারণে আসামিরা আমার দলীয় ছোট ভাইকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তারই জের ধরে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটে আসামিরা সকলে মিলে সুজনের বাসায় প্রবেশ করে এবং তাকে জোরপূর্বক তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে যায়। এর পর সুজন মালিথার পরিবারের লোকজন তাকে দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুজির একপর্যায়ে এলকাবাসীর মাধ্যমে জানতে পারি যে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে রাত ১টা ৩০ মিনিটে কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন মোল্লাতেঘরিয়া পূর্ব ক্যানালের পাড়ে গুলি করে হত্যা করে। পরের দিন লাশ উদ্ধারের পর নিহত সুজন মালিথার পরিবারের লোকজন আসামিদের কাছে গিয়ে সুজন মালিথাকে হত্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো সদুত্তর না দিয়ে আমাদের তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে একাধিকবার উক্ত ঘটনার বিষয়ে মামলা করার চেষ্টা করলে আসামিরা আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। ঘটনার বিষয়ে এলাকার অনেকেই অবগত আছেন।
২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় ‘কুমারখালী নাগরিক পরিষদ’র ব্যানারে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম আলতাফ। সেখানে অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়ার তৎকালীন এসপি এস এম তানভীর আরাফাত। তিনি তার বক্তব্যে বিরোধী পক্ষগুলোকে ‘তিনটি অপশন’ দেন । তানভীর আরাফাত বলেন, ‘এক. উল্টাপাল্টা করবা হাত ভেঙে দেব, জেল খাটতে হবে। দুই. একেবারে চুপ করে থাকবেন, দেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না। তিন. আপনার যদি বাংলাদেশ পছন্দ না হয়, তাহলে ইউ আর ওয়েলকাম টু গো ইউর পেয়ারা পাকিস্তান।