ডন ডেস্ক:-
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদে সকল নাগরিককে আইনের দৃষ্টিতে সমান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে প্রত্যেকেই আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। সহজ কথায় বলা যায়,মামলার বাদী কিংবা আসামী উভয়ের আইনের আশ্রয় নেয়ার অধিকার রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেও এই অধিকার স্বীকৃত। ১৯৪৮ সালের Universal Declaration of Human Rights (UDHR)-এ স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, সকল মানুষ আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং কোনো বৈষম্য ব্যতিরেকে প্রত্যেকেই আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। কাউকে খেয়াল খুশিমত গ্রেফতার বা আটক করা যাবে না এবং নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য শুনানীর মাধ্যমে উপযুক্ত আদালত কর্তৃক বিচার পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির থাকবে। কিন্তু উল্টো চিত্র,কুষ্টিয়া আদালতে। মামলা পরিচালনা ব্যায় দিন দিন বেড়েই চলেছে। বারের সাথে আইনজীবী সমিতির সমন্বয়হীনতার কারণে এডিএম কোর্ট নিয়মিত চলছেনা, বাড়ছে মক্কেলদের ভোগান্তি। ফৌজদারী কার্যবিধি ৯৮,১০০, ১৪৪ ধারার মামলাগুলো অগ্রসরে বিলম্ব ঘটছে। দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা মাধ্যমে এই সমস্যার সুরাহা করতে কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। পুলিশ ফাইল,ধার্য তারিখে নিয়মিত/সি আর মামলার হাজিরা,আত্মসমর্পণ,স্বাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সূচী না থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা আদালতের সামনে মক্কেল কে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। একই সময়ে সকল বেঞ্চে বিচারকার্য শুরু হওয়ায় একজন উকিলের পক্ষে সকল মামলায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। শিক্ষনবীশ উকিলদের হাতে মামলার নথি তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবেই স্বাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন স্থগিত হয়ে যায় অনেক সময়। ফলস্বরূপ, বাড়ছে মামলা জট। ২০২১-২০২২ মেয়াদে নির্বাচিত পরিষদের ১ম সভায় কুষ্টিয়া আদালতের ওকালতনামার মূল্য ১০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৪৫০ টাকা,হাজিরা ২০ টাকার স্থলে ৩০ টাকা ধার্য করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে আগত মক্কেলদের বিশ্রামের জন্য কোন ঠাঁই নেই। নেই বিজ্ঞ আইনজীবীগণের জন্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা। সহিংসতার শিকার শিশু ও নারীদের বসার জন্য পৃথক জায়গা নেই। জনাকীর্ণ হল রুমে বসে নির্যাতনের শিকার নারীরা উকিলের সাথে পরামর্শ করতে বিব্রত হচ্ছেন। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর জন্য পৃথক ঘরের ব্যবস্থা থাকলেও মায়েদের বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার নেই। হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি থাকলেও আদালতে নেই মক্কেল কল্যাণ সমিতি। মক্কেলদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, মামলা পরিচালনার জন্য উকিল ফি দেয়ার পরও ,মোহরার ফি ও প্রয়োজনীয় ডেমি,হাজিরা,ফিরিস্তি,নকলের দরখাস্তসহ অন্যান্য কাগজপত্র ক্রয়, নির্ধারিত কোর্ট ফি পৃথকভাবে পরিশোধ করার পরও বিচার প্রার্থী মক্কেল কে গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। যেকোন ফৌজদারী মামলার পলাতক/ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী আদালতে আত্মসমর্পণ করতে উল্লেখিত খরচের পাশাপাশি নথি তলবের জন্য পেশকার কে দিতে হয় ২০০/৩০০ টাকা। জামিনের রিকল কিনে দেয়ার পরও আসামীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা নেয়া হয়। আসামীর বিরুদ্ধে সমন ইস্যু হলেও পেশকার কে টাকা না দিলে সংশ্লিষ্ট থানায় সমন পৌঁছায়না। সরকারি হাসপাতালে ৫ টাকায় নাগরিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সরকার। থানায় হাজির হয়ে একজন নাগরিক বিনামূল্যে এজাহার দাখিল করতে পারেন। তেমনি আদালতে এসে উকিলের সম্মানী বাবদ কিছু টাকা এবং নির্ধারিত কোর্ট ফি ব্যাতিত অতিরিক্ত অর্থ খরচ হওয়া যৌক্তিক নয়। কিন্তু ধাপে ধাপে টাকা গুনতে গুনতে মক্কেলরা ক্লান্ত। অস্বচ্ছল নাগরিকের মামলা পরিচালনা করবে রাষ্ট্র। সেই লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে জাতীয় আইন সহায়তা কেন্দ্র। দুঃখজনক হলেও সত্য,কুষ্টিয়া ব্লাস্ট কর্তৃক পরিচালিত অধিকাংশ মামলাই চলছে কচ্ছপ গতিতে। ব্লাস্টের প্যানেল আইনজীবীগণ আরো মানবিক হবেন এমনটাই প্রত্যাশা। চলতি মাসের ২৭ তারিখে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। দুপুর ২টা থেকে রাত ১০ টা পযর্ন্ত চলছে কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে চায়ের আড্ডা,বিরিয়ানি,লুচি বিতরণ। এক অসমর্থিত সূত্র বলছেন,১১ টি পদে লড়ছেন ৩২ জন। সকল প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যায় যোগ করলে সংখ্যাটি হবে ৫০ লাখ। সহজে বোঝা যায়,এই ব্যায় ভার বহন করতে বাধ্য হবেন অসহায় মক্কেলরা। মামলা পরিচালনার ব্যায় হ্রাসে উদ্যোগ নিতে হবে।